আমি কেমন করে স্রস্টাকে চিনতে শিখলাম ! স্রস্টার প্রতি কেমন করেই বা বিশ্বাসী হলাম !
রুমী কবির
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ অক্টোবর ২০২৩, ১১:৩৫ অপরাহ্ণআমাদের জ্ঞানের ভান্ডারকে, মুক্ত চিন্তাকে বিকশিত করার একটি সুন্দর মাধ্যম আমাদের এই নিঃসীম উদার আকাশ ও নক্ষত্রের মেলা- তাই নয় কি ? কেননা মুক্ত চিন্তাকে বিকশিত করার মধ্য দিয়েই ভাবনার গভীরে নিমজ্জিত হয়ে যেতে পারি আকাশ নক্ষত্র বিশ্ব ব্রম্মান্ডের সৃস্টি রহস্য নিয়ে।
পাঠক বন্ধুরা, বুঝতে কি একটু খটকা লাগছে ? তাহলে আসুন, আমার সাম্প্রতিক একটি বিশ্লেষণ একটু খোলাখুলিভাবেই তুলে ধরি। আর এই বিশ্লেষনের ভেতর দিয়ে আমার চিন্তা-চেতনা থেকে স্রস্টাকে চেনা বা তার প্রতি বিশ্বাসী হওয়ার অভাবনীয় এক অনুভূতির নির্যাস বেরিয়ে আসতে সক্ষম হবে ইনশাহ আল্লাহ।
হ্যা, আকাশ আর নক্ষত্রের কথাই বলছিলাম। খালি চোখে রাতের আকাশের দিকে তাকালে মনে হয়, নিঃসীম শূন্যতায় গুটি কয়েক তারকার সমাহারে পরম নিশ্চিন্তে কতই না সুখময় মূহুর্ত পারি দিয়ে যাচ্ছে নিরন্তর চলা এই মহাকাশ। সংগৃহীত এই প্রথম ছবিটার ওপরের অংশটি দেখুন, ছবিতে সেটিই তো বোঝা যাচ্ছে !
আবার ছবিটির নিচের অংশে বিজ্ঞানীরা দেখছেন অন্য রকম এক আকাশকে। তাদের দেখা সেই আকাশটিও দেখুন, ভাবতেই অস্থির লাগে। রীতিমত প্রচন্ড চাপে দিশেহারা লক্ষ-কোটির চাইতেও অধিক সংখ্যক তারকারাজির হাট। এক অসহনীয় পরিস্থিতির আবর্তে গোটা আকাশটি যেন ঘন বসতির ঢাকা শহরের মতোই অস্থির চাপাচাপিতে ঠাসা হয়ে আছে।
কিন্তু ব্যাপারটা আসলেই কি তাই ? বিজ্ঞানীরা অনুসন্ধানী মেধা দিয়ে নানা জ্ঞান অর্জন ও গবেষনা করতে করতে হিসেব করে দেখেছন, মোটেই সেরকম কিছু নয়, সত্যি সত্যিই অসংখ্য তারকা বা গ্রহ-নক্ষত্রের সমাহারে পরিপূর্ণ এই মহা বিস্ময়ের বিশ্ব ব্রম্মান্ড বা মহাকাশ শুরু থেকে প্রতিটি মুহূর্ত অনন্তকালের পথে এভাবেই বিদ্যমান রয়েছে। চাপাচাপি বা ঠাসাঠাসি বলে মনে হলেও কিন্তু সব কিছুই চলছে একটি সুশৃঙ্খল নিয়ম কানুনের মধ্য দিয়ে। বিজ্ঞানীরা হিসেব-নিকেশের পর দেখছেন, মহাকাশে ছড়িয়ে ছিটিযে থাকা সকল গ্রহ নক্ষত্ররাই যার যার কক্ষপথে নিজ নিজ নিরাপদ অবস্থানের মধ্যে থেকে নিজ নিজ গতিবিধি, প্রদক্ষিণ সবকিছু ঠিকঠাকভাবে সম্পন্ন করে যাচ্ছে নিদৃস্ট একটি অংকের হিসেব ধরে এবং এভাবেই বহাল তবিয়তে টিকে আছে অনন্তকাল ধরে, এতে বিন্দু পরিমান বিশৃংখল কোন তৎপরতাই ঘটছে না।
এখন প্রশ্ন, এত সব তারকারাশির প্রদক্ষিন বা চলাফেরার এই ঝক্কি ঝামেলার ভীরে কি করে এই বিশাল মহাকাশ পরম প্রশান্তি নিয়ে টিকে আছে ? কি করেই বা সম্প্রীতিময় পরিবেশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ধরে রেখেছে সবাইকে নিয়ে !
আর আমরা তখন সাধারণ মানুষেরা এই নিঃসীম আকাশের দিকে চেয়ে কত বারই না আবেগ আপ্লুত হয়ে হয়ে ওঠছি, মূহুর্তের মধ্যে কবি হয়ে কবিতার পংক্তিমালা আবৃত্তি করে যাচ্ছি, ভাবাবেগে কখনও প্রেমিক প্রেমিকা, কখনও বা হয়ে ওঠছি দার্শনিক। এইভাবে সুন্দর আকাশকে নিয়ে আমাদের ভালো লাগা অদ্ভূত অনুভূতিগুলো কিছুক্ষনের জন্যে হলেও বুকের ভেতরে কখনও কখনও যে জেগে ওঠে, এতে কোন ভুল নেই।
তবে গোটা ব্যাপারটা সত্যিই এক মহা বিস্ময় ! এই বিস্ময়কর ব্যাপারটিই ভীষন রকমের কঠিন অংক ও বিজ্ঞানের ফলাফল। আর এই ফলাফলের নির্যাস থেকেই একই সাথে আমাদের এই পৃথিবী ও চারপাশের সৃষ্ট গ্রহ নক্ষত্রেরও অবস্থান দেখতে পাই।
এখন আমাদের মনে কি কখনও প্রশ্ন জাগে না যে, কে তবে সযতনে নির্মান করে রেখেছেন এতসব তারকারাশির বিশাল এই বিশ্ব পরিমন্ডলটিকে? কে সেই মহা কারিগর ? তিনি কি কোন ক্ষমতাধর ব্যক্তি নাকি মেধাসম্পন্ন কোন বিজ্ঞানী ? নাকি কোন ভিন্ন জগতের অজানা সুপার পাওয়ার মগজের প্রতিফলন ?
আসলে বিজ্ঞানীরা তো শুধু জ্ঞান আরোহন করেন পৃথিবীর ও আশপাশের বিশ্ব ব্রম্মান্ডের অজানাকে জানা, এর রহস্য বের করা বা খুঁজে বের করা, মানে সহজ কথায় আবিস্কার করা নিয়েই মত্ত থাকেন এবং মজার ব্যাপার, এইসব কিন্তু আগে থেকেই নির্মান বা সৃস্টি অবস্থাতেই বিদ্যমান ছিল, আর আমরা মানবকুলের সদস্যরা বিজ্ঞানীদের আবিস্কারের পূর্ব পর্যন্ত কোনভাবেই বিষয়গুলো জানার, বোঝার বা উপলব্ধি করার কোন সূযোগই পাইনি। অৰ্থাৎ কোন শক্তি বা নির্মান কর্তা বা স্রস্টা অবশ্যই আছেন এতসব কিছু নির্মানের পেছনে। আর বিজ্ঞানীরা দিনে দিনে সেসবই খুঁজে খুঁজে বের করছেন এবং তখনই আমরা বলছি অমুক জিনিসটি বা অমুক ফর্মূলাটি অমুক বিজ্ঞানী আবিস্কার করেছেন। আর আমরা এভাবে জ্ঞানের ভারে এততাই মত্ত হয়ে যাই যে, এই সহজ ভাবনাটিকে কখনই মগজের ভেতর নিয়ে আসি না, খুঁজে পাইনা বা পেতে চাই না।
আর অন্যদিকে সব সহজ উত্তর বা সমাধান পরিপূর্ণভাবে দেয়া হয়েছে অনেক অনেক কাল আগেই, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব নবী করিম হযরত মুহম্মদ (দঃ) এর মাধ্যমে আমাদের পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ কোরানের ভেতর। পবিত্র কোরান থেকেই আমরা খুঁজে পাই এই নির্মাতা বা সৃস্টিকর্তা তো আর কেউ নন, আমাদের পৃথিবীসহ গোটা বিশ্ব ব্রম্মান্ডের সমস্ত অস্ত্বিত্বের সর্বময় অধিকারী এক অদৃশ্য একক সত্তার শক্তি পরম করুমাময় আল্লাহ তায়ালা।
সুবহান আল্লাহ ! আমরা যদি এই পরম সত্যটিকে আত্মস্থ করে এই মহাশক্তির দিকে বা সৃস্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালার দিকে ধাবিত হই, তখনই তো আমাদের দৃস্টি শক্তি বা থুবরে পড়া জ্ঞান খুলে যেতে পারে উদার আকাশের মতোই !
আমাদের আরেকটা বিষয় মনে রাখা জরুরী যে, আমাদের বা বিজ্ঞানীদের মগজে ধারণকৃত সকল জ্ঞান বা উদ্ভাবনী ক্ষমতার সবই কিন্তু একটি নির্ধারিত পরিমন্ডলে সীমাবদ্ধ। একটা পর্যায়ে পৌঁছে তারা কোন গন্তব্য বা শেষ খুঁজে পান না। বস্তুত সভ্যতার প্রাথমিক যুগে আল্লাহ তায়ালাই মানুষের মগজে চিন্তায় চেতনায় জ্ঞানের পরিধিকে উদ্ভাবন-আবিস্কার বা রহস্যকে খুঁজে পাবার ক্ষমতা হিসেবে একটু একটু করে প্রসারিত করতে থাকেন। এ যেন এক ‘হাইড এন্ড সিক’ খেলার মতো যা এক সময় আল্লাহ’র কাছে গোপন অবস্থায় ছিল, মানবকুলকে তিনিই আবার সেসব খুঁজে বের করার বা আবিস্কারের সুযোগ করে দিতে শুরু করলেন। আর এইভাবে আমরা বিজ্ঞানের এক এমন পর্যায়কে স্পর্শ করার সক্ষমতা অর্জন করেছি, যে সময়টায় আমরা পৃথিবী ছাড়িয়ে চন্দ্রের মাটিতে পদার্পন করছি। মঙ্গলকে এখনও সরেজমিনে স্পর্শ করতে না পারলেও অনেক দূর এগিয়েছি। রীতিমত রবোট যান সেখানে গিয়ে ছবি তুলে পাঠাচ্ছে পৃথিবীর মানুষের কাছে। আর মানবকুল তখন অহংকারের সাথে ঘোষনা দিচ্ছে এইসব অজানাকে আবিস্কারের সাফল্যের কথা। অথচ এইসব আবিস্কার তো কেবল মাত্র মানুষের কাছেই আবিস্কার ! আল্লাহ তায়ালা তো বহু আগেই এইসব নির্মানের মাধ্যমে একটি সুসৃঙ্খল গাণিতিক ফর্মুলার মধ্যে আবদ্ধ করে রেখেছেন। মানুষ কি করে এই গভীর রহস্য ভেদ করে গন্তব্য খুঁজে পাবে ? অথচ আমরা প্রকৃত নির্মাতাকে না খুঁজে নিজেরাই নানা কিছু আবিস্কারের সফলতা বা ক্ষমতার দাবীদার সেজে উৎসসিত হয়ে ওঠছি।
মজার ব্যাপার, বিজ্ঞানীরা বিশ্ব ব্রম্মান্ড সৃস্টির রহস্য বের করতে গিয়ে একটা পর্যায়ে এসে গবেষনার কুল কিনারা না পেয়ে শেষমেশ ১০ লক্ষ ২০ লক্ষ বছর আগের গ্যালাক্সি গ্রহ নক্ষত্রগুলোর মধ্যে বিগ ব্যাং খ্যাত মহা বিস্ফোরনের মধ্য দিয়ে পৃথিবীসহ আজকের এইসব গ্রহ নক্ষত্রের জন্ম- এমনতর যুক্তি দিয়ে ক্ষান্ত হচ্ছেন। তার মানে দাড়ালো আল্লাহ প্রদত্ত সীমাবদ্ধ জ্ঞান ও পরীক্ষা গবেষনার মাধ্যমে এর বেশি কোন ধারনাই তারা পাচ্ছেন না।
অথচ মানব জাতি এই সীমাবদ্ধ জ্ঞানের যতটুকুই অর্জন করতে পারছে, তার জন্যে যিনি সব কিছুই জানেন, বোঝেন, সব কিছুর নির্মানকর্তা, সেই স্রস্টার কাছে কোনভাবেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে না, বরং নিজেদের অর্জনের সাফল্যে দাম্ভিকতা, অহংকারের মোহে বস্তুত স্রস্টাকেই অস্বীকার করে যাচ্ছে। পক্ষান্তরে নিরহংকারী মানুষ যারা স্রস্টার কাছে নিজেকে সমর্পন করছে, আনুগত্য স্বীকাৱ করছে, তাদেরকেই মহান স্রস্টা পছন্দ করছেন। মূলতঃ এই চেতনাটিই মানুষের মধ্যে বিদ্যমান থাকার কথা।
অল্প কথায়, আমরা বিজ্ঞানীরা যা কিছু উদ্ভাবন করছি, সেটি বহু আগেই নির্মানকৃত অবস্থাতেই ছিল এবং আল্লাহই সেসব নির্মান বা সৃস্টি করে রেখেছেন। আর আমাদের এই আবিস্কারের জ্ঞান যেটি আগের মানুষগুলোর মগজে বা মেধায় আল্লাহ দেন নি, কিন্তু পরবর্তিতে আধুনিক যুগের মানুষ আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছাতেই আবার সেই সীমাবদ্ধ জ্ঞান প্রসারিত হওয়ার মাধ্যমে আবিস্কারের ক্ষমতাটি অর্জন করতে পারছেন। তার মানে দাঁড়ালো, ঘুরে ফিরে অপ্রতিদ্বন্দি একক ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র স্রস্টা এই আল্লাহ’ই বিশ্বব্রম্মান্ডসহ গ্রহ নক্ষত্র পৃথিবীৱ সব কিছুর একক নিয়ন্ত্রক।
কাজেই আসুন, আমরা এই বিশ্ব ব্রম্মান্ড বা দুনিয়া তথা সকল প্রাণীকুল, মানবকুল, সাগর-পর্বত, প্রকৃতি, নিসর্গ, জলবায়ু, খাদ্য, পানীয় সর্বোপরি আমাদের নি:শ্বাস-প্রশ্বাস, জীবন-মৃত্যুর সকল ব্যবস্থাপনা-পরিচালনার অধিকারী একক সত্তার এই স্রস্টার দিকেই ধাবিত হই, তার কাছেই মাথা নত করি, সিজদায় যাই। সেটিই হবে আমাদের স্রস্টা বা আল্লাহ’র প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধের একমাত্র গন্তব্যস্থল।
যদি তার দেয়া নির্দেশনাবলী পালন করে আমাদের সাময়িক বসবাসের আস্রয়স্থল এই পৃথিবী বা দুনিয়ার বুকে কল্যাণমুখী কাজে নিজেদেরকে নিয়োজিত করি, আমাদের ভুল-ত্রুটি অপরাধের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে তারই আনুগত্য প্রকাশ করি, তাহলেই না আল্লাহকে খুশি করার মধ্য দিয়ে এই পৃথিবীতে তার দেয়া এসাইনমেন্ট বা দ্বায়িত্ব পালনটি পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে পারি !
আল্লাহ তায়ালা তো শুধু এই বিশ্ব ব্রম্মান্ড বা অন্যান্য গ্রহ নক্ষত্র পৃথিবী, চন্দ্র, সূর্য সৃস্টি করেই ক্ষান্ত হন নাই। তার অসংখ্য গ্রহের মধ্য থেকে পৃথিবী নামক গ্রহটিকে মানব জাতির জন্যে উপযোগী করে দিয়েছেন। সেইসাথে অন্যান্য সকল প্রাণীকুলের আবাসও তিনি এই পৃথিবী বা দুনিয়াতেই নির্ধারন করেছেন। কাজেই বিজ্ঞানীরা আজকাল যে কত শত গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্রের খোঁজ পেয়ে যাচ্ছেন, ছুটে যাচ্ছেন চন্দ্রের মাটিতে, রকেট-নভোযান পাঠাচ্ছেন মঙ্গলের বুকে, প্রতিদিনই বিজ্ঞানীদের পাঠানো যন্ত্র থেকে অসংখ্য ছবি ছুটে আসছে পৃথিবীৱ বুকে মুহুর্মুহ, অথচ কোথাও নিঃশাস প্রশ্বাসের অক্সিজেন নেই, কোন প্রাণীর অস্ত্বিত্বও নেই । আছে শুধুমাত্র এই পৃথিবীতেই।
তার মানে হলো, মূলত আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা অনিচ্ছার প্রতিফলনটিই হচ্ছে মূখ্য। তিনি হযরত আদম (আঃ)কে সৃস্টি করে তার ভেতরে প্রাণ সঞ্চার করেছেন। এরপর মানব সৃষ্টির ইতিহাসও আমরা অনেকেই জানি। ইবলিশের প্ররোচনায় বা কুমন্ত্রনায় লোভের দিকে আসক্ত হয়েছিলেন প্রথম মানব হযরত আদম (আঃ) ও তার জীবন সাথী বিবি হাওয়া। আর সেই ভুলের মাশুলের কারনে তখন থেকে মানব জাতি পৃথিবীবাসী হলো এবং আদম (আঃ) ভুল বুঝতে পেরে আল্লাহ’র কাছে ক্ষমা চাইলে মহান আল্লাহ তাঁর এই দুই বান্দাকে ক্ষমা করলেন ঠিকই, কিন্তু পাশাপাশি বেহেস্ত থেকে স্থানাতরিত করে পৃথিবীৱ মাটিতে পাঠালেন। আর জানিয়ে দিলেন যে, মানব জাতিকে এখন থেকে সাময়িক কালের জন্যে পৃথিবীতে বসবাস করতে হবে এবং সেখানকার জীবন যাপনকালীন সময়ের ভালো-মন্দ পাপ-পূণ্যের পরীক্ষার সম্মুক্ষীন হতে হবে। ইবলিশ পৃথিবীৱ সকল মানুষের পেছনেই লেগে থাকবে নানা প্ররোচনার মাধ্যমে যেভাবে আদম-হাওয়াকে দিকভ্রান্ত করেছিল। এর সব ঘটনা প্রবাহই তো ঘটেছে মহান আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছার আলোকেই !
সেই থেকে মানব জাতি ভলো-মন্দের দোলাচলে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মধ্য দিয়ে পৃথিবীৱ জীবন প্রবাহের পাট চুকিয়ে মৃত্যু নামক পালা বদল শেষে পুনরায় ফিরে যাচ্ছে অনন্তকালের গন্তব্যে। এখানে যারা আল্লাহ তায়ালার দেয়া দিক নির্দেশনা, কোরান ও হযরত মুহম্মদ (সঃ) এর সুন্নাহ’কে অনুসরণ করে সন্তোষজনক পার্ফরম্যান্স সম্পন্ন করতে পারবেন, তাদের জন্যে পুরস্কার জান্নাত, আর যারা ইবলিশের প্ররোচনায় লোভে আসক্ত হয়ে সঠিক এসাইনমেন্ট থেকে ছিটকে পড়ে বিভ্রান্তের পথে নিপতিত হবেন, আল্লাহ প্রদত্ত তাদের জন্যে নির্ধারিত হবে দোজখের শাস্তি।
কাজেই যারা আল্লাহ তায়ালা বা তার সৃস্টির রহস্য নিয়ে সন্দিহান থাকেন, কোরানকে নিয়ে অস্পস্টতায় ভোগেন, কিংবা ধর্মের প্রশ্নে নাস্তিকতা-আস্তিকতা নিয়ে নানা তর্কে মেতে উঠেন, তাদের কাছে সহজ সমাধান তো এই নিঃসীম নীলাকাশ কিংবা রাতের অন্ধকারের গ্রহ-নক্ষত্রে আচ্ছন্ন আকাশ থেকেই পেয়ে যেতে পারেন। আমাদের জ্ঞানের ভান্ডারকে, আমাদের মুক্ত চিন্তাকে খুলে দেয়ার একমাত্র মাধ্যম আমার দৃষ্টিতে এই নিঃসীম উদার নীলাকাশ এবং এই নক্ষত্রের মেলা। কাজেই স্রস্টাকে চিনতে এই নীলাকাশ, বিশ্ব ব্রম্মান্ডসহ বিশাল জগতের এই নির্মান শৈলীই আমাকে নিশ্চিত সমাধান এনে দিতে সক্ষম হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ !
ফলে গুরুত্বপুর্ণ এই বিষয়টি আমার চেতনায় এখন নাড়া দিচ্ছে যে, আল্লাহ আমাদের সৃস্টিকর্তা বলেই সকল ভালো মন্দ কাজেরও বিচারক তিনিই হতে পারেন ! এজন্যে মন্দকে দূরে ঠেলে ভালো’র দিকেই নিজেদের জীবন প্রবাহকে পরিচালিত করতে হবে।
আরেকটি কথা। আমার বাবা দাদা মা নানা পূর্ব-পুরুষেরা আল্লাহ’কে বিশ্বাস করতেন, মুসলমান ছিলেন, নামাজ পড়তেন, রোজা রাখতেন, কাজেই আমিও একই ধারাবাহিকতায় তাই পালন করে যাচ্ছি, সমাজে আমার আইডেন্টিটি হবে মুসলমান হিসেবে- অথচ মনে-প্রাণে আমি স্রস্টার কাছাকাছি নই, মুসলমান পরিবারের সন্তান বলে আমাকে এইসব ধর্মীয় আচার-অনুস্ঠানে কিংবা নামাজ-রোজায় সামিল হতে হয়। মোদ্দা কথা আমি স্রস্টা বা আল্লাহ’কে না চিনলেও, মনে-প্রাণে বিশ্বাস না করলেও পরিবার ও সমাজকে খুশি রাখতেই আমি নামে মাত্র অর্থে ধর্ম-কর্ম করি ইত্যাদি ইত্যাদি- যদি এধরনের মানসিকতা আমাদের কারও মধ্যে থেকে থাকে, তবে আসুন, সবার আগে এই অস্পস্টতা বা ধর্মের নামে পরিবার তথা সমাজের সাথে সর্বোপরি আল্লাহ’র সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার সামিল এহেন আচরণ বা মানসিকতা থেকে আমরা পরিশুদ্ধ হই। ইবলিশের প্রতারনা বা ছায়া থেকে বের হয়ে মন থেকে সেসব গুজামিলের চিন্তা ঝেরে ফেলে আল্লাহ’র কাছে তওবা বা ক্ষমা প্রার্থনা করাই এক্ষেত্রে অতি উত্তম বলে আমি মনে করি।
আসলে আমাদেরকে বুঝতে হবে, স্রস্টা হচ্ছে একটি অদৃশ্য শক্তি বা একক সত্তা। আমরা এই পৃথিবীতে যেমন যেকোন বিষয়কে চিনতে গেলে বা বুঝতে গেলে সেটির পরীক্ষা-নিরীক্ষা, গবেষনা বা চাক্ষুস প্রমানাদি সাপেক্ষে নিঃশ্চিত হয়ে নেই। কিন্তু স্রস্টা বা আল্লাহ’কে চিনতে এবং বিশ্বাস করতে এধরনের কোন পরীক্ষা বা প্রমানাদি প্রাপ্তির কোন উপায় নেই। আল্লাহ’কে চিনতে জানতে ও স্রস্টা হিসেবে মেনে নিতে হলে সবার আগে চাই বিশ্বাস এবং সেইসাথে পবিত্র কোরানের প্রতিটি সুরা মনোযোগ দিয়ে অনুধাবন করা। তাহলেই আল্লাহ’কে চেনার সাথে সাথে নিজেকে চেনাও সহজ হবে। নিজের ভালো মন্দ বিচার বিশ্লেষন করা, কোন ভালো কাজটি করা দরকার, আর কোন খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে, এর সব উত্তর পেতেও তখন সহজ হতে পারে। মূল কথা পবিত্র কোরানই আমাদেরকে সঠিক দিক নির্দেশনা দেবে যদি আল্লাহ’র প্রতি আমার বিশ্বাসটি মজবুত হয়।
আরেকটি পর্যবেক্ষণ থেকে আমাকে আজকাল ভাবায়, সেটি হচ্ছে, যখন দেখি একজন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ তার নিজ ধর্মকে জানার পর, বোঝার পর বাপ-দাদা পূর্ব-পুরুষের যুগ যুগ ধরে বহন করে নিয়ে আসা সেই ধর্মটির প্রতি হঠাৎ করেই একদিন ভিন্ন মতাবলম্বী হয়ে পড়েন এবং এর কারণ হিসেবে জানা যায়, সেই ব্যক্তিটি গত কিছুদিন বা কিছু বছর অন্যান্য ধর্মের ওপরেও জানার চেস্টা করে গেছেন। ফলে সেসব নিয়ে বিস্তর পড়ালেখা করে শেষে নিজ ধর্মকেই সঠিক বলে মেনে নিতে পারছেন না। আর অবশেষে সঠিক ধর্ম হিসেবে বেছে নিয়েছেন ইসলামকেই। মোট কথা বিস্তারিত জানা বা বোঝা-পরার পরই তার কাছে মুসলমান ধর্ম ও সেই ধর্মের শেষ শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহম্মদ (সঃ)-এর অনুসারী হতেই সাচ্ছন্দ বোধ করছেন তিনি এবং চূড়ান্ত ফলাফলে তিনি ধর্মান্তরিত হয়ে একজন সাচ্চা মুসলমান হয়ে গেলেন।
এখন আমার প্রশ্ন হলো, এই নয়া মুসলিম যেভাবে জীবনকে ইসলামী আদর্শে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, যেভাবে আল্লাহ’কে চিনতে পেরেছেন, আল্লাহ’র প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে পারছেন, আমরা মুসলমান পরিবারে জন্ম নিয়েও কি সেইভাবে আল্লাহ’কে চিনতে পেরেছি? নাকি তার মতো করে ইসলামের আদর্শকে ধারণ করতে সক্ষম হচ্ছি ? আসলে মুসলমান হিসেবে এখানেই হয়তো আমাদের দুর্বলতা বা অক্ষমতা, যার কারনে আমাদের জীবন যাপনে এবং আল্লাহ’র প্রতি আনুগত্য হওয়া থেকে আমরা অনেক দূরে নিক্ষিপ্ত হয়ে আছি। কাজেই আমার মতে, আমাদেরকে ওই সাচ্চা নয়া মুসলিমটির মতোই ইসলামকে আত্মস্থ করা জরুরী। তবেই আমাদের ভেতরে সুস্থ জীবন যাপনের পরিবেশ তৈরি হতে পারে, আল্লাহকে চিনতে ও তাঁর কাছাকাছি হওয়া সম্ভব হতে পারে। ফলে পুরো সমাজ ব্যবস্থায় সুস্থতা ফিরে আসতে পারে। মনে প্রাণে আত্মশুদ্ধির উপলব্ধি অনুভূত হলে মানুষের অপরাধ প্রবণতা কমতে পারে, সমাজ থেকে দূর পেতে পারে খুন, ধর্ষন, আনাচার, অন্যের সম্পদ বেদখল ইত্যাদি সব পাপাচার।
সবশেষে বলতে চাই, আমি কোন ইসলামিক স্ক্ললার, গবেষক বা মুফতি-আলেম নই, নিতান্তই একজন সাধারণ মানুষ। কাজেই আজকের কথাগুলো কেবলমাত্রই আমার ক্ষুদ্র চিন্তা-ভাবনার প্রতিফলন। এতে কোথাও যদি কোন ত্রুটি কিংবা অসঙ্গতিপূর্ণ ভুল তথ্য দিয়ে থাকি, সেজন্যে সবার কাছে সবিনয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
লেখাটি শেষ করার প্রাক্কালে সকলকেই আমার ভাবনাগুলো পড়ার জন্যে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। সকল সৃস্টির সেরা সৃস্টি মানব জাতির সকলকেই আল্লাহ তায়ালা হেদায়েত দান করুন। আমাদের সকল ভুল-ভ্রান্তি, অপরাধ ক্ষমা করে দিয়ে আমাদেরকে পাপমুক্ত রাখুন, আগামীদিনের পথচলাকে কন্টকমুক্ত, নিরাপদ রাখুন, আল্লাহ’র খুশির জন্যে ভালো কিছু করার সুযোগ দান করুন, এই প্রার্থনা আজ। মহান আল্লাহ তায়ালা আপনাদের সকলকে ভালো রাখুন, সুস্থ রাখুন। আমীন !
আটলান্টা, জর্জিয়া, যুক্তরাস্ট্র।